ব্রাজিলের গম: হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ আপিলে বহাল
প্রকাশিত
হাই কোর্টের ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন ‘উপস্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে দিয়েছে আপিল বিভাগ।
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এই আদেশ দেয়।
রাষ্ট্রপক্ষে এ বিষয়ে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম; তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।
অন্যদিকে রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
আদেশের পর টুটুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ প্রত্যাহার চেয়ে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম। আদালত বলেছেন, হাই কোর্টের অর্ডার ইনোসেন্ট। আদালত আমাদের আবেদন উপস্থাপিত হয়নি বিবেচনা করে খারিজ করেছেন। এর ফলে হাই কোর্টের ওই পর্যবেক্ষণই বহাল থাকছে।”
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম ‘নষ্ট ও পচা’ বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলার খবর গণমাধ্যমে এলে গত জুনে এ বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়।
এরপর ‘নিম্নমানের’ গম আমদানি ও সরবরাহের অভিযোগ দুদককে দিয়ে তদন্তের আদেশ চেয়ে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী গত ২৮ জুন একটি রিট আবেদন করেন।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে ৩০ জুন হাই কোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়। ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি-না, সে বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। সে অনুযায়ী, খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের পাঠানো প্রতিবেদন গত ৫ জুলাই আদালতে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ।
বাংলাদেশ শিল্প বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার কথা উল্লেখ করে মহাপরিচালকের প্রতিবেদনে বলা হয়, “ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম চুক্তিপত্রের নির্দেশ অনুসারে গ্রহণীয় সীমার মধ্যে থাকায় মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত বলে খাদ্য অধিদপ্তর হতে প্রত্যয়ণ করা হল।”
ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের বেঞ্চ গত ৮ জুলাই এ সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে রায় দেয়।
ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা সেই গম নিতে কাউকে ‘বাধ্য করা যাবে না’। ইতোমধ্যে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, বিভিন্ন ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণ করা ওই গম (ব্রাজিলের) ‘শনাক্ত করা সাপক্ষে’ কেউ ফেরত দিতে চাইলে তা নিতে হবে।
খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ওই পর্যবেক্ষণ স্থগিতের নির্দেশনা চেয়ে চেম্বার আদালতে আবেদন করলে গত ৯ জুলাই বিচারক তা মঞ্জুর করে শুনানির জন্য বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
সে অনুযায়ী বিষয়টি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে তোলা হলে সর্বোচ্চ আদালত হাই কোর্টের দেওয়া পুরো রায়ের কার্যকারিতা দুই সপ্তাহ স্থগিত রাখতে বলে। আর এই সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষকে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলা হয়।
সে অনুযায়ী রাষ্ট্রপক্ষ নিয়মিত লিভ টু আপিল করলেও তা উপস্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ হয়ে গেল।
আমদানি করা দুই লাখ পাঁচ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন গমের মধ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে খাদ্য অধিদপ্তর এর আগে আদালতকে জানিয়েছিল।