ঢাকা কলেজের অনলাইন ক্লাসে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী
মুক্তমন ডেস্ক: >> অনলাইন পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৯৯.৩৪% শিক্ষার্থী
>> প্রশংসায় ভাসছেন অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ
করোনাকালে স্থবির শিক্ষাকার্যক্রম বিকল্প উপায়ে এগিয়ে নিতে গত ১ এপ্রিল থেকে অনলাইন ক্লাস চালু হয় ঢাকা কলেজে।
যা করোনা পরিস্থিতিতে দেশে প্রথম৷ ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদের এমন উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করছেন দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানরা।
গত ২০ আগস্ট ফেসবুকের এক স্ট্যাটাসে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হাবিবুর রহমান লেখেন, ‘ঢাকা কলেজের কাজপাগল সম্মানিত অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ অনলাইন শিক্ষা ও পরীক্ষা কার্যক্রমে যে ভূমিকা রেখেছেন তা বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকল। ধন্যবাদ তাকে।’
বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও কবি নজরুল সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আই কে সেলিম উল্ল্যাহ খোন্দকার লেখেন, ‘অধ্যক্ষ হলো একজন লিডার। সীমাবদ্ধতা আছে, তবুও তিনিই পারেন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে।
অধ্যক্ষ নেহাল আহমেদের নেতৃত্বে ঢাকা কলেজ করোনাকালে প্রথম থেকেই ইন্টারের ক্লাস অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে শুরু করে। যেটা আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই আমি প্রথমেই অনার্স-মাস্টার্সের ক্লাসগুলো নিয়ে অনলাইনে যাই।
ইন্টারে ঢাকা কলেজের ক্লাস শেয়ার শুরু করি। পরে আমার শিক্ষকরা অভ্যস্ত হলে ইন্টারও পুরোদমে শুরু করি। ঢাকা কলেজের আইসিটি বিভাগ অনেক সুসংগঠিত।’
গত ২০ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা কলেজের প্রথম অনলাইন পরীক্ষা। একাদশ শ্রেণির ওই পরীক্ষায় কলেজের ১১৫৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র একজন অসুস্থতাজনিত কারণে অংশ নিতে পারেননি। অর্থাৎ ৯৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেয়ার বিষয়কে কলেজ প্রশাসনের সফলতা হিসেবে দেখছেন শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা ৷
অনলাইন পরীক্ষার কারিগরি দিক দেখছেন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আবু সালেহ মো. মুজাহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষায় আমরা শতভাগ সফল ৷ দু-একজন শিক্ষার্থী ছাড়া সবাই সুষ্ঠুভাবে প্রথম পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে।
অধ্যক্ষ স্যারের দিকনির্দেশনা আর আইটি বিভাগ সমৃদ্ধ থাকায় এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা পরীক্ষায় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা আলাদা সেট প্রশ্নের ব্যবস্থা করি। আমাদের এই উদ্যোগ দেশের জন্য একটা রোল মডেল।’
করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের পর থেকে অনলাইনে ক্লাস নিয়ে আসছেন ঢাকা কলেজের ইংরেজী বিভাগের প্রভাষক রাজীব রায়৷ তিনি বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পরই ঢাকা কলেজ সর্বপ্রথম অনলাইনে ক্লাস নেয়া শুরু করে৷
প্রথমে যখন অনলাইনে ক্লাস নিতে বলা হয়েছিল, তখন মানসিকভাবে একটু চাপে ছিলাম। কারণ অনলাইনে ক্লাস নেয়ার অভিজ্ঞতা আমাদের ছিল না। তবে প্রথম ক্লাস নেয়ার পর সেই ধারণা বদলে যায়৷
এখন প্রতিনিয়ত অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছি৷ এতে ঢাকা কলেজসহ দেশের অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হচ্ছে৷ অধ্যক্ষ মহোদয়ের এই প্রশংসনীয় উদ্যোগে আমরা সফল৷’
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন অনেক শিক্ষার্থী৷ এতে ঢাকা কলেজের বাইরের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হচ্ছেন৷
সৈয়দ আতর আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী অমিত হাসান বলেন, ‘কলেজ বন্ধ থাকায় ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে৷ তবে ঢাকা কলেজের ফেসবুক পেজ ফলো করে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসে অংশ নিচ্ছি৷ অনেক উপকৃত হচ্ছি৷’
অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম প্রসঙ্গে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নেহাল আহমেদ বলেন, ‘করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হলে যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় তখন আমরা এইচএসসির শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন ক্লাস চালু করি।
উদ্দেশ্য ছিল, সারাদেশের শিক্ষার্থীরা যাতে উপকৃত হয়। উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। ঢাকা কলেজে এইচএসসিতে ১১৫৪ শিক্ষার্থী থাকলেও অনলাইন ক্লাস দেখছে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। এতেই প্রমাণিত হয় যে, ঢাকা কলেজের অনলাইন ক্লাসে অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হচ্ছে।’
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় খুব শিগগিরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলা পর্যন্ত অনলাইনে এই শিক্ষা কার্যক্রম চলবে বলেও জানান তিনি।