‘আপনাকে দিয়ে আর যাই হোক সিনেমা হবে না। আপনি বরং মুরগীর ব্যবসায় নামেন’
সাইফুল বাতেন টিটো:
জনাব আশরাফ শিশির, আপনাকে দিয়ে আর যাই হোক সিনেমা হবে না।
আপনি বরং মুরগীর ব্যবসায় নামেন।
বন্ধু হাসান সান্তনু বলল
– টিটো ভাই শিশির ভাইয়ের গাড়ী ওয়ালা সিনেমাটি দেখেছেন?
– নাহ
– ইউটিউবে পাওয়া যায় দেইখেন। অনেক গুলো পুরস্কার পাইছে তো দেইখেন।
বলে সে মিটি মিটি হাসছে। আমি বাসায় ফিরে বউকে নিয়ে দেখতে শুরু করলাম। দেখে টেখে মনে হলো দুইলাইন না লিখলে অন্যায় হয়ে যায়। আসলে দেখে আমি যা লিখলাম তা আসলে সমালোচনা না, তীব্র ভাবে কটাক্ষ। আসলে গাড়ীওয়ালা দেখে তীব্র কটাক্ষ ছাড়া আমি আর কিছুই লিখতে পারলাম না। আমি ক্ষমা প্রার্থী।
টাইটেলঃ
একজন বিখ্যাত পেশাদার অভিনেতা একটি চলচ্চিত্রে কত মিনিট উপস্থিত থাকলে তার নাম মূখ্য অভিনেতা হিসেবে টাইটেলে দেয়া যায়?
ষ্টর্টিং টাইটেলে যখন অভিনেতা অভিনেত্রীদের নাম ওঠা শুরু করল তখন সবার প্রথম উঠলো রোকেয়া প্রাচীর নাম। আমরা তা দেখে ধরে নিলাম উনি মূখ্য অভিনেতা অভিনেত্রীদের একজন। তার পর উঠলো বর্ষিায়ান অভিনেতা মাসুম আজিজের নাম। আমরা ধরে নিলাম উনিও মূখ্য অভিনেতা অভিনেত্রীদের একজন। তার পর যথাক্রমে অন্যান্য আর্টিষ্টের নাম আসতে লাগল। সবার শেষে একজন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার প্রাপ্ত পেশাদার বর্ষিয়ান অভিনেতার নাম এভাবে এলো
‘‘এবং রাইসুল ইসলাম আসাদ’’
এটা দেখে বরাবরের মতো আমরা ধরে নিলাম ওনার ভুমিকাও বোধহয় এই অসংখ্য পুরস্কার প্রাপ্ত সিনেমায় অনেক।
কিন্তু মজার বিষয় হলো রোকেয়া প্রাচী কিছু সময় ধরে স্ক্রীনে থাকলেও মাসুম আজিজের মাত্র দুয়েকটি ডায়ালগ আর মোট ১০/১৫ সেকেন্ড উপস্থিতি ছাড়া তার তেমন কোন এক্সপ্রেশনও পাইনি আমরা। থাকলো রাইসুল ইসলাম আসাদ। তিনি শুধু একবার (নাম যেমন শেষে ছিলো উনি ফেইস সহ স্ক্রীনেও আসলেন সবার শেষে) ৫ সেকেন্ডর জন্য রিক্সা চালিয়েছেন আর ৫ সেকেন্ডের জন্য একটি শিশুকে কোলে নিয়ে নাড়াচাড়া করেছে।
ভাবলাম বেশী পুরস্কার পাওয়া সিনেমায় মনেহয় এমনই হয়।
টাইম মেশিনঃ
সিনেমার চার মিনিট পনের সেকেন্ডের সময় জানতে পারলাম সময়কাল জসিম-শাবানা যুগের (আশির দশক)। কিন্তু হঠাৎ পাঁচ মিনিট উনচল্লিস সেকেন্ডের মধ্যে আমরা ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জাকির হোসেন রাজু পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘‘মনে-প্রানে আছো তুমি’র’’ গান- ‘‘এক বিন্দু ভালোবাসা দাও আমি এক সিন্ধু হৃদয় দেব’’ গানটি সুর ভাজতে ভাজতে এক জন বাড়ীতে ঢুকছে।
আটাশ মিনিট চুয়াল্লিশ সেকেন্ডের সময় ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র রশের বাইদানী নিয়ে হাজির হলেন আবার সেই সিনেমা হলের প্রচারক। ভালো কথা।
টাইগার নামের এনার্জি ড্রিংকএর বোতলে বীট লবন… ১৯৮৪ সাল!!!
একই উনুনের পাশে লাল একটি প্লাষ্টিকের জগ সেই সাথে মাটির রান্নার হাড়ি। বলি এটা কি সায়েন্স ফিকশন? আইমিন টাইম মেশিন সঙক্রান্ত কোন গল্প?
হয়তোবাঃ
শিশির ভেজা এক সকাল বেলা পরিচালক আশরাফ শিশির ভাই হয়তো ঘুরতে গিয়ে দেখলেন দুপাশে সাড়ি সাড়ি নারিকেল গাছ। মনে হলে চট করে একটা ষ্টক ফুটেজ নিয়ে রাখলে কেমন হয়।
– এই অমুক সকালের এই লাইট টা থাকতে থাকতে এই এক্ষুনি একটা শট নিয়ে রাখি ক্যামেরাটা জলদি লইয়া আসেন তো।
ক্যামেরা ম্যান ক্যামেরা নিয়ে এসে লো-বেইজের উপরে রাখলো। তখন ক্যামেরা ম্যান বলল
– বস একটা লোক হাটাইয়া দেই?
– আরে দেন দেন আমারে আবার জিগান লাগে?
– হ পরে যদি ফুটেজে টান পরে তহন লাগাইয়া দেওন যাইব।
আর না হলে ঐ শৈল্পিক শটটির কি দরকার আমি কোন ভাবেই বুঝতে পারিনি, যেমন বুঝতে পারিনি ২০ সেকেন্ড ধরে ছাগলকে কেন গাছে উঠিয়ে পাতা খাওয়ালেন।
আরো কিছুঃ
আটাশ মিনিট দুই সেকেন্ডের সময় ক্লোজে শিক্ষকেরা জাতীয় সঙ্গীত গাইছেন আমরা ভয়েজ শুনলাম বাচ্চাদের। এখানেও নিশ্চই টাইম মেশিনের একটা বিষয় আছে। পরে হয়তো আসবে। দেখি..
মন্তাজ না মমতাজ?
হঠাৎ করে দেখতে পাই কারন ছাড়া পাখি সাদৃশ কিছু একটা ঝিমাচ্ছে, কোন কিছুর আঁশের উপরে পাঁচ সেকেন্ড ধরে মাছি বসে আছে, এক মধ্য বয়সী লোক মাথায় হাত দিয়ে হা হুতাস করছে, এগুলো হয়তো কোন উঁচু স্তরের মন্তাজ।
পরিবেশ ও প্রকৃতিঃ
বাই দ্যা ওয়ে এই চলচ্চিত্রটিতে যে পরিমান গরু ছাগল, মুরগী, পাখি, মাছি দেখাচ্ছে এটা এনিম্যালদের উপরে করা কোন ডকুমেন্টারী নয়তো?
গ্রামের জলাভুমিতে শাপলা তোলার মসয় হেব্বিমেটাল মিউজিক, কি অদ্ভুৎ সংমিশ্রন হ্যা?
গল্পের নায়ক হাবিল কাবিল রিকসা সাইকেল মেরামতের দোকানে এসে হাপাচ্ছে, কিন্তু কথা ডেলিভারি দিতে পারছে সাভাবিক ভাবেই। এটা কি কম?
আবারঃ
হাবিল কাবিল যখন গাড়ী বানাচ্ছে তখন কি হাই টেশন আর হাই টেম্পোর মিউজিক….. কিন্তু বেচারা হাবিল কাবিল বুঝলই না কাজ করে চলছে ধীর লয়ে। এটা অর্টিষ্টের ব্যর্থতা। পোষ্ট প্রোডাকশনে ডিরেক্টর যে কি করবে তা ওদের আগেই বোঝা উচিৎ ছিলো না?
ভয়াবহ ইনসার্টঃ
রেস শুরু হওয়ার আগে আমরা গাড়ীর বেয়ারিং আর স্টিংয়ারিং এর ইনসার্ট দেখলাম পাক্কা এক মিনিট..!!! দরকার ছিলো নিশ্চই।
কতগুলো শিশু চিৎকার করে চলছিলো। আবার মাত্র বিয়াল্লিশ সেকেন্ড উনি বেযারিং আর স্টিয়ারিং দেখালেন।
হঠাৎঃ
যে হাবিল কাবিলদের ঘরে আমরা শুরু থেকে কুপি আর হারিকেন দেখে এসেছি হঠাৎ এক ঝড়ের রাতে সেই ভাঙা অন্ধকার বাড়ীর আঙিনায় হাবিল কাবিলদের অন্য আরেকটি ঘরের বাইরে জ্বলতে দেখি ইলেকট্রিক বাতি। কি বাত্তি জ্বালাইলি ওরে ও মাইনকা…….
চলচ্চিত্র টি দেখে আমরা কি শিখলামঃ
আমরা এই গাড়ীওয়ালা চলচ্চিত্রটি দেখে অনেক কিছুই শিখলাম। কাহাকে বলে প্যান শট তা যদি এই চলচ্চিত্র দেখে কেউ না শিখতে পারে তবে তার আর এ জন্মে শেখা হয়ে উঠবে না।
ইনসার্ট কাকে বলে? কত প্রকার? কি? কি? ও কত সেকেন্ড ব্যবহার করা যায় তা শিখলাম।
শিখলাম চলচ্চিত্রে হেব্বি মেটাল সং (সঙ) এর প্রয়োগ।
তবে সব শেষে বলতে চাচ্ছি এই গাড়ী ওয়ালা চলচ্চিত্রটির উদ্দেশ্য বিধেয় কি তা দীর্ঘ গবেষনার বিষয়। একটি গ্রামের প্রকৃতি ও পরিবেশের উপরে নির্মিত ডকুমেন্টারী হিসেবে গাড়ীওয়ালা বেশ ভালোই। অসংখ্য ফুল, পাখি, নদী, ক্ষেত খামার আমরা অনেক সময় ধরে বেশ ডিটেইলস দেখেছি।
সবশেষেঃ
সবশেষে একটা কথা না বললেই না। আর তা হলো গাড়ী ওয়ালা সিনেমাটি দেখে আমার মনে হয়েছে মোটামুটি লেখা পড়া জানে এমন একটি কিশোর ছেলে হাতে ক্যামেরা পেয়েছে। সামনে যা পেয়েছে তাই রেকর্ড করেছে। পরে সে জেনেছে যে এডিটিং বলতে একটি বিষয় রয়েছে। সেখানে জোড়া তালি দেয়া যায়, আগে পিছে করা যায়, মিউজিক লাগানোর ব্যবস্থা আছে। কিশোর সেই সুযোগটিও কাজে লাগিয়েছে। এই চলচ্চিত্র যদি ১৩ টি পুরষ্কার পেয়ে থাকে তাহলে এম এ জলিল অনন্ত সাহেবের সিনেমা ডবল অস্কার আর নোবেল পাওয়া উচিৎ। শিশির ভাই আমি জানি আমাকে আপনার জুতা পেটা করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু কি করব ভাই আমি যে মিথ্যে বলতে পারি না। আপনি এখনও কিছুই শিখে উঠতে পারলেন না, সেই পাকশিতে আপনার বিখ্যাত (ক্ষতবিক্ষত ও বলা যায়) উক্তি পাভেল ভাই তো মোচ খুলে ফেলছে উনি ভয়েজ ওভার দিবেন কি করে?’’ সেই সুত্রে পরে রইলেন। শেখার প্রয়োজন বোধ করলেন না। সিনেমা ফাজলামি করার বিষয় নয়। আপনাকে দিয়ে আর যাই হোক সিনেমা হবে না।
আপনি বরং মুরগীর ব্যবসায় নামেন।
(লেখাটি ফেসবুক টাইমলাইন থেকে নেয়া)